কানাডার বেগম পাড়াসহ বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রে অর্থপাচারকারীদের তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষ নাম পরিচয় দাখিল করার বিষয়ে হাই কোর্টের শুনানি আজ রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ধার্য রয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দীন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আজ আমরা এফিডেভিট আকারে একটা প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করব। যে মামলাটি আজ হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানির জন্যে (কজলিস্ট) কার্যতালিকার শীর্ষে রয়েছে।’
এর আগে কানাডার বেগম পাড়াসহ বিদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রে অর্থপাচারকারীদের নাম ঠিকানা পরিচয়ের বিষয়ে পরবর্তী তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
অর্থপাচার বিষয়ে দুদকসহ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রতিবেদন দাখিলের পর গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আরও শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত প্রতিবেদন আকারে হাই কোর্টে জমা দেয় দুদক ও রাষ্ট্রের অন্যান্য পক্ষ। এ সময় প্রতিবেদনে পুরোনো তথ্য থাকায় দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।
প্রতিবেদন দেখার পর আদালত বলেন, ‘এখানে ২২ অক্টোবর হাইকোর্টের দেয়া আদেশের পরের কোনো আপডেট তথ্য নেই। আমরা অর্থপাচারকারীদের নাম জানতে চাই। আপনারা নতুন নাম বলুন। সম্রাট তো কারাগারেই আছেন, আর নতুন করে অন্যান্য কারা জড়িত তাদের নাম বলুন। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলেও দুদক মাত্র ৪১ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক মানুষ অর্থপাচার করে। তাদের সবার জানার অধিকার আছে। আমরা অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানা জানতে চাই।’
এর আগে সম্রাটসহ অর্থপাচারকারীদের ১০০ জনের নামসহ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় হাই কোর্টে। এরপর এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন আদালত।
বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে পাঁচটি সংস্থা হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। কানাডায় অর্থপাচারের বিষয়ে সে দেশের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইএইউ)।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব মিশন অর্থপাচারের রিপোর্ট দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা আদালতে দাখিল করা হবে। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত দুদকের মামলার হিসাবে ২৫০০ কোটি টাকা অর্থপাচার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে দুদক।
সিআইডি জানিয়েছে, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ সাতজন হ্যাকারদের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কায় অর্থ পাচার করেছেন। শুধু সম্রাট এবং এনামুল হক আরমানই ২৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯১ টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেছে।
এর আগে গত ২২ নভেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চান। বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নিয়ে ১৯ এবং ২১ নভেম্বর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের আদেশের জবাব তৈরি করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে দুবার বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা। সবশেষ গত ১৪ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও এনবিআরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে বসে ঠিক করলাম। সবার বক্তব্য আমাদের দিলে, আমরা এটা এফিডেভিট করে আদালতে জমা দেব, অন্যকিছু না। তথ্য যা আছে সেটাই দেয়া হবে। সবাই আদালতের আদেশ মোতাবেক জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এ বিষয়ে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল জারি করেন। রুলে অর্থপাচারকারী সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রুল বিবেচনায় থাকা অবস্থায় বিদেশে টাকা পাচারকারীদের নাম-ঠিকানাসহ সব ধরনের তথ্য (মামলাসহ, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা) প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে দুদক চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়।